শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:১৬ পূর্বাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম:
সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে নৌপথে এক কয়লা আমদানিকারকের প্রায় সোয়া চার লাখ টাকার কয়লা ডাকাতি করে নিয়ে গেছে একদল দুর্বৃত্ত। সোমবার দিবাগত মধ্যরাতে উপজেলার শ্রীপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের সুলেমানপুরের পাটলাই নদীর কানামুইয়া জলমহাল সংলগ্ন নৌপথে ইঞ্জিন চালিত (বড় ট্রলার) নৌকা থেকে সোয়া চার লাখ টাকা মুল্যের ২২ মেট্রিকটন কয়লা ডাকাতি করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।
ডাকাতি হওয়া নৌকায় থাকা চলনদার উপজেলার টেকেরঘাটের বাসিন্দা হাসিম মিয়া মঙ্গলবার জানান, বড়ছড়া শুল্ক স্টেশনের কয়লা আমদানিকারক রিয়াজ উদ্দিনের ডিপো থেকে এলসিকৃত ১০৮ মেট্রিক টন কয়লা বোঝাই করে নৌকাটি বালিয়াঘাট পাটলাই নদী থেকে সুনামগঞ্জের ব্রাম্মণগাঁও ইট খলার উদ্দেশে রবিবার ছেড়ে যায়।
তিনি আরো বলেন, নৌপথ শুকিয়ে যাওয়ায় পরদিন সোমবার রাতে নৌকাটি সুলেমানপুরের পাটলাই নদীর কানাম্ইুয়া জলমহাল এলাকা সংলগ্ন নৌপথে রাতে নোঙ্গর করে রাখা হয়। এরপর একদল ডাকাত মধ্যরাতে অপর একটি ট্রলারে করে এসে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে কয়লা বোঝাই নৌকায় উঠে আমাকে, নৌকার মাঝি ও সুকানীসহ চারজনকে রামদারর মুখে জিম্মি করে নৌকার ক্যাবিনের ভেতর তালাবদ্ধ করে রেখে প্রায় দু’ঘন্টায় ২২ মেট্রিক টন কয়লা লুটে নিয়ে যায়।
মঙ্গলবার সন্ধায় কয়লা আমদানিকারক উপজেলার পুটিয়া গ্রামের রিয়াজ উদ্দিন বলেন, ডাকাতি হওয়া কয়লা মুল্য প্রায় সোয়া চার লাখ। তিনি আরো বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি থানায় অভিযোগ করতে গেলে এলাকার বিশিষ্ট লোকজন এ ঘটনা নিষ্পক্তির আশ্বাস দেন।
উপজেলার বড়ছড়ার অপর কয়লা আমদানিকারক জয়নাল আবেদীন বলেন, গত ৭ ফেব্রুয়ারী রাতে পাটলাই নদী থেকে একই কায়দায় একদল ডাকাত আমার কয়লা বোঝাই নৌকা থেকেও প্রায় ৩ লাখ ৮৭ হাজার টাকা মুল্যের ২০ মেট্রিকটন কয়লা ডাকাতি করে নিয়ে যায়।
অভিযোগ তুলেছেন চারাগাঁও শুল্ক স্টেশনের অপর কয়লা আমদানিকারক সাইফুল ইসলাম গত ৩০ জানুয়ারী রাতে আমার নৌকা থেকেও ২ লাখ ৮৯ হাজার ৭৭০ টাকার সমপরিমাণ ১৫ মেট্রিকটন কয়লা একদল ডাকাত রাতের আধারে লুটে নিয়ে যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কয়লা ব্যবসায়ী জানান, উপজেলার সুলোমান ও এর আশেপাশের এলাকায় কয়েকটি দুর্বৃত্তদের দল গঠন হয়েছে, ওরা কেবল গত কয়েকমাস ধরেই একের পর এক কয়লা চুরি ও ডাকাতি করে যাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা আরো জানান, এসব ডাকাতি হওয়া কয়লা ভুয়া মিনিপাস চালানপত্র দিয়ে ছোট ছোট ট্রলারে করে পার্শ্ববর্তী নেত্রকোনার কলমাকান্দা, মিঠামইন, ইটনা, কিশোরগঞ্জে ভৈরবে নিয়ে গিয়ে বিক্রয় করা হয় আর এসবের পেছনে পর্দার আড়ালে থেকে স্থনীয় কয়েকটি প্রভাবশালী চক্র একদিকে যেমন কয়লা চুরি-ডাকাতি করাচ্ছে তেমনি এসব চুরি-ডাকাতির কয়লা অল্প দামে কিনে দেদারছে কয়লা ব্যবসায়ী সেজে কয়লার ব্যবসা করে যাচ্ছে।
অপর একটি সুত্র জানায়, দিন কয়েকপুর্বে একটি কয়লার নৌকায় ডাকাতির পর ওই ডাকাতির কয়লা কেনা বেচার সাথে শ্রীপুর কুরেরপাড় গ্রামের মামদ চোরাকারবারী নেকবর, তরং গ্রামের বিষু পাল, বানিয়াগাঁও কৃষ্ণতলা গ্রামের ডিজেন পাল ও বানিয়াগাঁও গ্রামের আশিকসহ চার ব্যক্তির সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলেও প্রভাবশালী চক্রের তোপের মুখে শেষ পর্যন্ত থানা পুলিশে অভিযোগই করা সম্ভ হয়নি।
অভিযোগ প্রথমে অস্বীকার করলেও উপজেলার কৃষ্ণতলা গ্রামের কটু পালের ছেলে ডিজেন পাল বলেন, কয়লা ডাকাতির সাথে আমি জড়িত নই তবে সুলেমানপুরের কয়েকজনের নিকট থেকে বেশ কয়েকটন কয়লা কিনে আমরা কলমাকান্দা পাঠিয়েছি। সুলেমানপুরে কীভাবে কয়লা কেনা-বেচা করেন এমনকি কারা কীভাবে কয়লা সংগ্রহ করেন এসব প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যায় বিষু পাল।
ব্যবসায়ীরা আরো জানান, শুধু এ চক্রই নয় এভাবে নৌপথে কয়লা চুরি-ডাকাতির কাজে জড়িয়ে পড়েছে ওই নৌপথ কেন্দ্রীক সুলেমানপুরসহ আশে পাশের কয়েক গ্রামের কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০টি গ্রুপ।
তাহিরপুর থানার ওসি শ্রী নন্দন কান্তি ধর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জানান, কয়লা ডাকাতি বা চুরি বিষয়ে কোন অভিযোগ পাইনি, অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।